ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক এড়াতে তৎপর ভারত, অর্ধেকের বেশি পণ্যে শুল্ক কমাতে রাজি

আগামী ২ এপ্রিল থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। অর্থাৎ যে দেশ মার্কিন পণ্যে যত শুল্ক আরোপ করে, যুক্তরাষ্ট্রেও সেই দেশের পণ্যে ঠিক সেই পরিমাণ শুল্ক আরোপ করবে। সেই পরিস্থিতি এড়াতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছে ভারতসহ যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ বাণিজ্য সহযোগীরা।

ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার সংবাদে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের হাত থেকে বাঁচতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য যেমন কাঠবাদাম ও ক্র্যানবেরিতে আরও শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে তারা অবশ্য রয়টার্সের আরেক সাংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের মধ্যে ৫৫ শতাংশের ওপর শুল্ক কমাতে রাজি হতে পারে ভারত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সদ্ভাব থাকলেও ট্রাম্প সব সময় ভারতের শুল্কনীতির কট্টর সমালোচক। এর আগে তিনি অনেকবারই বলেছেন, ভারত শুল্কের রাজা। তিনি ভারতের সভ্যতা ও নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করার পাশাপাশি কখনোই ভারতের শুল্কনীতির সমালোচনা করতে রাজি হননি। কিন্তু এবার ট্রাম্প রীতিমতো পণ করেছেন, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতি করছে, তাদের ছাড়া হবে না—কানাডা, মেক্সিকো, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত—কাউকে না। তিনি মনে করেন, এসব দেশ এত দিন যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়েছে, এখন থেকে তা আর হতে দেওয়া হবে না।

তবে ভারত এ ক্ষেত্রে বেশ কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে ২৬ মার্চ চার দিনের নয়াদিল্লি সফরে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডেন লিঞ্চের নেতৃত্বাধীন ওই প্রতিনিধিদল ভারতে আসার পরই শুল্ক প্রশ্নে ইতিবাচক ও নমনীয় বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

২৬ মার্চ লোকসভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারতের গড় আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ করা হয়েছে। বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী জিতিন প্রসাদ এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ২০২৩ সালে ভারতের সরল গড় শুল্কহার ছিল ১৭ শতাংশ। ২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটের পর সরল গড় শিল্প শুল্ক ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

সম্প্রতি লোকসভায় অর্থ বিল পাসের সময়ে ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য যে ৬ শতাংশ করারোপ করা হতো, সেটাও তুলে নেওয়া হয়েছে। মূলত ইলন মাস্কের এক্স, গুগল ও মেটার ওপর এই শুল্ক আরোপ করা হতো। বার্তা পরিষ্কার, সুর নরম করেছে নয়াদিল্লি।

এ ছাড়া চলতি বছরের বাজেটে মার্কিন মোটরসাইকেলে শুল্ক হ্রাস করে ভারত। তখন মার্কিন ব্র্যান্ড হারলে ডেভিডসনের আমদানিতে ভারত আরও ১০ শতাংশ শুল্ক হ্রাস করে। এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত হারলে ডেভিডসনের ওপরে ৫০ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছিল। এবারের বাজেটে যা আরও কিছুটা কমানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *